শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ন
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র। সম্প্রতি র্যাব-৬ খুমেক থেকে দালাল আটক করার পর কিছুদিন চক্রটি নিস্ক্রিয় থাকলেও পুনরায় প্যাথলজি, এক্স-রে, ইসিজিসহ বিভিন্ন বিভাগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই চক্রের সদস্যরা। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ যেমন প্রতারনার শিকার হচ্ছে তেমনি দূর্ভোগও বেড়েছে রোগী ও স্বজনদের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিস্ক্রিয় থাকায় দালাল চক্র আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে।
জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসার স্থল। গত কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারনা ও হয়রানির শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠে। বিগত বিভিন্ন সময়ে দালালদের এ ধরনের প্রতারনা ও দূর্ভোগের শিকার হওয়া রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের আগষ্ট মাসে র্যাব সদস্যরা হাসপাতালে অভিযান চালায়। এ সময়ে হাসপাতাল ভিতর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে ৩২ জন দালালকে আটক করে। এ অভিযানের পর কয়েকমাস দালালচক্র নিস্ক্রিয় থাকলেও আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসকল দালাল চক্রের কারনে দূর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীরা প্রতারিত হয়ে সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর থেকেও আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
জানা গেছে, এসকল দালাল রোগীপ্রতি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কমিশনের বিনিময়ে হাসপাতাল থেকে রোগী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়স্বজনকে কম খরচে চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে দ্রুত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা রোগীদের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এই চক্রের সদস্যদের সাথে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজোশ রয়েছে বলে ভুক্তোভূগিদের অভিযোগ।
শনিবার (১২ নভেম্বর) বহির্বিভাগে রক্ত পরীক্ষা ও এক্স-রে করতে আসা দিঘলিয়া উপজেলার বাসিন্দা জামাল গাজী জানান, খুব সকালে হাসপাতালের ভেতর এক্স-রে করতে এসে অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় এক লোক তাঁর বাড়ি কোথায়, কী করেন ইত্যাদি জানতে চান। তারপর জিজ্ঞাসা করেন সঙ্গে আর কেউ এসেছে কি না এবং হাসপাতালে তাঁর কোনো আত্মীয় আছে কি না। দালাল চক্রের সদস্য পরে তাঁকে বলে যে, হাসপাতালের পরীক্ষা সরকারি পরীক্ষা বলে দায় সারাভাবে করা হয়, সঠিক হয় না। বাইরে থেকে ভালো পরীক্ষা করা যায়, তাঁর সঙ্গে গেলে খরচও বেশি লাগবে না। জামাল গাজী বুঝতে পারেন লোকটি দালাল চক্রের সদস্য বিধায় ফাঁদে পা দেন নি।
অপর একজন প্রতারনার ভুক্তোভূগি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা দিদারুল হাসান জানান, চিকিৎসা নিতে এসে কয়েকবার প্রতারনার শিকার হয়েছি। ল্যাব টেষ্ট দ্রুত সময়ে করানোর কথা বলে সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে ৪টি টেষ্ট করাতে ৪৭০০ টাকা নিয়েছে। পরবর্তীতে জানতে পারি,এই পরীক্ষাগুলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ল্যাব টেষ্ট করতে ১৮০০ টাকা খরচ হবে। এক মাস আগে চিকিৎসা নিতে এসে তখন হাসপাতালের আউট সোর্সিং কর্মী পরিচয় দিয়ে বেড পাইয়ে দিবে বলে ৩০০ টাকা নেয় এক লোক। পরে তাকে আর পাই নি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান হাসপাতালে ফের দালাল চক্রের উপদ্রবের কথা স্বীকার করে দৈনিক দেশ সংযোগকে বলেন, হাসপাতাল পরিচালনার প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে সারাদিন আমরা দালাল ধরার জন্য সময় ব্যয় করলে হাসপাতাল পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। তবে আমরা চেষ্টা করি রোগীদের সচেতন করার। কিন্তু দূর থেকে আসা রোগীরা না বুঝে অনেক সময় এদের ফাদে পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ডিসি অফিসসহ প্রশাসনের কাছে আমরা বলেছি স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং সেই সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লোকসানের সম্মুক্ষিন হচ্ছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA